RECENT POST

নোটিশ বোর্ড

মডেল টেস্ট

আইনের চাকরি

From our Blog

Showing posts with label আর্টিকেল. Show all posts
Showing posts with label আর্টিকেল. Show all posts

01 December 2018

দলিল জাল কি-না তা পরীক্ষা করার নিয়ম


১. সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে দলিলের প্রকৃতি অনুযায়ী চারটি রেজিস্ট্রার বা ভলিউমে লেখা হয়ে থাকে। কোনো দলিল নিয়ে সন্দেহ হলে রেজিস্ট্রি অফিসে সংরক্ষণ করা দলিলের সাল মিলিয়ে দেখতে হবে। এ জন্য নির্দিষ্টভাবে দরখাস্ত করতে হবে। এতে দলিলটির যাবতীয় তথ্য দিতে হবে।
২. এক জমির একাধিক মালিকের নামে করা থাকলে ধরে নিতে হবে দলিলটি জাল হতে পারে। এ ক্ষেত্রে সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে মূল মালিক কে, তা নির্ণয় করতে হবে।
৩. অনেক সময় স্বাক্ষর জালিয়াতি করে দলিলদাতা বা গ্রহীতার সাজা হয়। এ ক্ষেত্রে স্বাক্ষর বিশেষজ্ঞের মাধ্যমে স্বাক্ষরের সত্যতা যাচাই করিয়ে নেওয়া যেতে পারে। এ ছাড়া ভূমি অফিস থেকে বিভিন্ন সিল পরীক্ষা করেও জালিয়াতি নির্ণয় করা যায়। খেয়াল রাখতে হবে, অনেক আগের দলিলে আগের চিহ্নিত কিছু সিল ব্যবহারই থাকে। আগের দলিল কিন্তু সিল যদি নতুন হয়, তাহলে ধরে নিতে হবে, দলিলটি জাল হতে পারে। একই সঙ্গে তারিখটিও ভালোভাবে যাচাই করতে হবে। দলিল রেজিস্ট্রির তারিখ কোনো সরকারি বন্ধের দিন থাকলে সন্দেহের অবকাশ থাকবে। অনেক সময় অর্পিত সম্পত্তি বা মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি জীবিত দেখিয়ে জাল করা হয়।
৪. সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিস থেকে জমির মিউটেশন বা নামজারি সম্পর্কে খোঁজ নিতে হবে। নামজারিতে ধারাবাহিকতা ঠিক আছে কি না, সেটা সুচারুভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। যদি দেখা যায়, সিএস জরিপের সঙ্গে বিক্রেতার খতিয়ানের কোনো গরমিল আছে, তাহলে বুঝতে হবে, কোনো জটিলতা আছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, জরিপ খতিয়ানে জমির পরিমাণ পরবর্তী সময়ে যতবার বিক্রি হয়েছে, তার সঙ্গে জমির পরিমাণ মিল আছে কি না, তা যাচাই করে দেখা। দাগ নম্বর, ঠিকানা এসব ঠিক আছে কি না, এসব যাচাই করতে হবে।
৫. জমির স্বত্ব কী বা মালিকানা যাচাই করতে হবে। বিক্রেতার কাছ থেকে সব দলিল, বিশেষ করে ভায়া দলিল চেয়ে নিতে হবে। সাব-রেজিস্ট্রি অফিস থেকে জানতে হবে সব দলিলের ক্রমিক নম্বর, দলিল নম্বর ঠিক আছে কি না।
৬. সম্প্রতি কোনো আমমোক্তারনামা দলিল থাকলে তাতে উভয় পক্ষের ছবি ব্যবহার হয়েছে কি না যাচাই করতে হবে।
৭. কোনো দান করা জমি হলে দলিলে সম্পাদনের তারিখ দেখে কবে জমিতে গ্রহীতা দখলে গেছে তা যাচাই করতে হবে। দলিলটি রেজিস্ট্রি করা কি না এবং দলিলদাতার সঙ্গে গ্রহীতার সম্পর্ক কী, তা যাচাই করতে হবে।
৮. সম্প্রতি সম্পন্ন হওয়া কোনো বিক্রীত দলিলের দলিল লেখকের নাম ঠিকানা জেনে সরেজমিন কথা বলে নেওয়া দরকার।
৯. দলিল সম্পাদনের সময় ব্যবহূত স্ট্যাম্পের পেছনে কোন ভেন্ডার থেকে স্ট্যাম্প কেনা হয়েছে এবং কার নামে কেনা হয়েছে খেয়াল রাখুন। প্রতিটি স্ট্যাম্পের পেছনে একটি ক্রমিক নম্বর উল্লেখ থাকে। এ নম্বরটি ঠিক আছে কি না, প্রয়োজনে স্ট্যাম্প বিক্রেতার সঙ্গে দেখা করে যাচাই করে নিন।

তালাক, একে-অপরের বিরুদ্ধে মামলা ও তার ফলাফল




আইনের ভাষায় তালাক হচ্ছে ‘বিবাহ বন্ধন ছিন্ন করা অর্থাৎ স্বামী স্ত্রীর পারস্পরিক সম্পর্ক যদি এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে, একত্রে বসবাস করা উভয়ের পক্ষেই বা যে কোন এক পক্ষের সম্ভব হয় না, সেক্ষেত্রে তারা নির্দিষ্ট উপায়ে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটাতে পারে।’
সুমির (ছদ্ম নাম) দাম্পত্য জীবনে এমনটিই ঘটেছিল। অবশেষে তিনি তার স্বামীকে তালাক প্রদান করেন। কাবিননামার ১৮ নম্বর ঘরে স্বামী-স্ত্রী একে অপরকে তালাক প্রদানের ক্ষমতা দেওয়া ছিল। সেই অধিকারের ভিত্তিতে সুমী স্থানীয় কাজি অফিস থেকে তালাকের যাবতীয় প্রক্রিয়া শেষ করে তালাকনামা স্বামীর বরাবর পাঠিয়ে দেন। কিন্তু স্বামীর বসবাসরত স্থানীয় চেয়ারম্যান অফিসে পাঠানো হয়নি কোনো তালাকের কপি। সুমীর এ বিষয়টি জানা ছিল না। স্থানীয় কাজি অফিস থেকেও পাঠানো হয়নি কোনো কপি।
কিন্তু আইন অনুযায়ী স্বামী বা স্ত্রী যে কেউ একে অপরকে তালাক দিতে চাইলে তাকে যে কোন পদ্ধতির তালাক ঘোষণার পর যথাশীঘ্রই সম্ভব স্থানীয় ইউপি/পৌর/সিটি মেয়রকে লিখিতভাবে তালাকের নোটিশ দিতে হবে এবং তালাক গ্রহীতাকে উক্ত নোটিশের নকল প্রদান করতে হবে। চেয়ারম্যান/মেয়র নোটিশ প্রাপ্তির তারিখ হতে নব্বই দিন অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত কোনো তালাক বলবৎ হবে না। কারন নোটিশ প্রাপ্তির ত্রিশ দিনের মধ্যে চেয়ারম্যান/মেয়র সংশ্লিষ্ট পক্ষদ্বয়ের মধ্যে আপোষ বা সমঝোতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে সালিশী পরিষদ গঠন করবে এবং উক্ত সালিশী পরিষদ এ জাতীয় সমঝোতার (পুনর্মিলনের) জন্য প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থাই অবলম্বন করবে।
সুমী তালাকনামায় যেদিন স্বাক্ষর করেন, সেদিন থেকে পার হয়ে যায় দুই মাস। এর মানে ৯০ দিন ইদ্দতকাল পালন হতে হলে আর মাত্র এক মাস অপেক্ষা করতে হবে। সুমীর স্বামী আইনি দুর্বলতার সুযোগে এরই মধ্যে সুমীকে তার কাছে ফিরে পেতে পারিবারিক আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। এই মামলাটির নাম দাম্পত্য অধিকার পুনরুদ্ধার মামলা। এই মূল মামলাটি করার এক সপ্তাহ পর সুমীর স্বামী একই আদালতে একটি অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আবেদন করেন এই মর্মে যে, সুমী যাতে অন্য কোথাও বিয়ে না করতে পারেন। এই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত সুমী ও তার বাবাকে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আপত্তি দাখিলের জন্য ১০ দিনের সময় দিয়ে তাদের ঠিকানায় সমন পাঠিয়ে দেয়।
সমন হাতে পেয়ে সুমীর চেহারায় দুশ্চিন্তা আর অস্থিরতার ছাপ স্পষ্ট হয়ে উঠে। তার বাবাও হয়ে পড়ে বিধ্বস্ত। কারন এক মাসে দুটি সমন তারা পান। একটি দাম্পত্য অধিকার পুনরুদ্ধার মামলার লিখিত জবাব দাখিলের জন্য, আরেকটি অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আপত্তি দাখিলের জন্য।
দাম্পত্য অধিকার পুনরুদ্ধার মামলায় বিবাদী করা হয়েছে তিনজনকে। প্রথম বিবাদী সুমীর বাবা, দ্বিতীয় বিবাদী তার মা এবং তৃতীয় বিবাদী সুমী নিজে। আরজিতে সুমীর স্বামীর অভিযোগ, তাঁর স্ত্রীকে জোর করে তালাক দিতে বাধ্য করেছেন তার বাবা। এখন তিনি তাকে নিয়ে ঘর করতে চান। কিন্তু সুমীর ভাষায়, তার স্বামী দুশ্চরিত্রের লোক। নানাভাবে অত্যাচার করত। বাইরে মদ আর নারী নিয়ে ব্যস্ত থাকত। জুয়া খেলত। স্ত্রী আর তার মেয়ের প্রতি কোনো খেয়াল রাখত না। এমন পাষণ্ড আর নির্দয় লোকের সঙ্গে ঘর করার চেয়ে একা থাকা ভালো-এই সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে বাধ্য হয়ে তাকে তাকে তালাক দিই।
সুমী যাতে অন্য কোথাও বিয়ে না করতে পারেন এই অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আবেদনে সুমীর স্বামীর অভিযোগ ‘বিবাদীগণ পরস্পর যোগসাজশে অন্যায় ও বেআইনিভাবে ৩ নম্বর বিবাদীকে অর্থাৎ তার স্ত্রীকে ইদ্দতকালীন সময়ের মধ্যেই অন্যত্র পুনঃবিবাহ দেওয়ার জোর অপতৎপরতায় লিপ্ত হইয়া জনৈক চাকুরীজীবী পাত্র নির্বাচন করিয়া ফেলিয়াছেন এবং যেকোন সময় তার স্ত্রীকে উক্ত পাত্রের সহিত বেআইনীভাবে পুনঃবিবাহ সংঘটন করিতে পারেন।’
কিন্তু আইনের প্রশ্ন হচ্ছে, পারিবারিক আদালতে দাম্পত্য অধিকার পুনরুদ্ধার মামলায় অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আবেদন চলে কি না। মকবুল মাজেদ বনাম সুফিয়া খাতুন মামলায় (৪০ ডিএলআর ৩০৫, এইচসিডি) মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগের সিদ্ধান্ত এরকম যে, ১৯৮৫ সালে লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জের সহকারী জজ আদালতে একটি মামলা হয়। পারিবারিক আদালতের অধ্যাদেশে করা সর্বপ্রথম মামলাটিতে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি উত্থাপিত হয়। এতে স্বামী তাঁর স্ত্রীর দ্বিতীয় বিয়ের ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা প্রার্থনা করে। আদালত নিষেধাজ্ঞার আবেদন অগ্রাহ্য করেন। পরে জেলা জজ আদালতে আপিল করা হলে আপিল নামঞ্জুর হয়। পরে হাইকোর্ট বিভাগে রিভিশন করা হয়। হাইকোর্ট বিভাগ তার রায়ে বলেন, ‘পারিবারিক আদালত অধ্যাদেশে ২০ ধারা অনুযায়ী দেওয়ানি কার্যবিধির ধারা প্রয়োগ যোগ্য নয়।
অবশেষে সুমীর স্বামীর দায়ের করা মামলাটির শুনানি হলো। আদালত আদেশ দিলেন, ‘ইদ্দতকাল পর্যন্ত অর্থাৎ ৯০ দিন অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত স্ত্রী অন্যত্র বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হইতে পারিবে না এ মর্মে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা মঞ্জুর।’ সাধারণত আইন অনুযায়ী তালাকের নোটিশ প্রেরণের পর ইদ্দতকাল পর্যন্ত, অর্থাৎ ৯০ দিন অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত তালাক কার্যকর হয় না। এ সময় অন্যত্র বিয়ে করার ক্ষেত্রে আইনে নিষেধ আছে। আদালত ইদ্দতকাল পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা দিয়ে এ আইনের কার্যকারিতা আরও পাকাপোক্ত করলেন।
এখানে প্রশ্ন উঠতে পারে তাহলে মূল মামলাটির অর্থাৎ দাম্পত্য অধিকার পুনরুদ্ধার মামলাটির কী হবে?’ সহজেই বলা যায়, মূল মামলার জবাব দিতে হবে। মামলায় লড়তে হবে। শুনানিতে সুমী আদালতে উপস্থিত হয়ে বললেন, কাবিননামার ১৮ নম্বর ঘরে তার তালাক প্রদানের ক্ষমতা দেওয়া আছে। তিনি স্বেচ্ছায় এবং স্বজ্ঞানে তার স্বামীকে তালাক দিয়েছেন। আর তিনি তার স্বামীর ঘর করতে চান না। বিজ্ঞ আদালত ওই দিনই মামলাটি খারিজ করে দিলেন। আইনত সুমীর মেয়েটি সাবালিকা হওয়া পর্যন্ত মায়ের হেফাজতেই থাকবে।
১৯৩৯ সালের মুসলিম বিবাহ বিচ্ছেদ আইনে অত্যন্ত— সুষ্পষ্টভাবে বলা হয়েছে কি কি কারণে একজন স্ত্রী আদালতে বিয়ে বিচ্ছেদের আবেদন করতে পারবে।
কারণগুলো হলোঃ
১. চার বছর পর্যন্ত স্বামী নিরুদ্দেশ থাকলে।
২. দুই বৎসর স্বামী স্ত্রীর খোরপোষ দিতে ব্যর্থ হলে।
৩. স্বামীর সাত বৎসর কিংবা তার চেয়েও বেশী কারাদ- হলে।
৪. স্বামী কোন যুক্তিসংগত কারণ ব্যতিত তিন বছর যাবৎ দাম্পত্য দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে।
৫. বিয়ের সময় পুরষত্বহীন থাকলে এবং তা মামলা দায়ের করা পর্যন্ত বজায় থাকলে।
৬. স্বামী দুই বৎসর ধরে পাগল থাকলে অথবা কুষ্ঠ ব্যাধিতে বা মারাত্মক যৌন ব্যধিতে আক্রান্ত থাকলে।
৭. বিবাহ অস্বীকার করলে। কোন মেয়ের বাবা বা অভিভাবক যদি ১৮ বছর বয়স হওয়ার আগে মেয়ের বিয়ে দেন, তাহলে মেয়েটি ১৯ বছর হওয়ার আগে বিয়ে অস্বীকার করে বিয়ে ভেঙ্গে দিতে পারে, তবে যদি মেয়েটির স্বামীর সঙ্গে দাম্পত্য সর্ম্পক (সহবাস) স্থাপিত না হয়ে থাকে তখনি কোন বিয়ে অস্বীকার করে আদালতে বিচ্ছেদের ডিক্রি চাইতে পারে।
৮. স্বামী ১৯৬১ সনের মুসলিম পারিবারিক আইনের বিধান লংঘন করে একাধিক স্ত্রী গ্রহণ করলে।
৯. স্বামীর নিষ্ঠুরতার কারণে।

উপরে যে কোন এক বা একাধিক কারণে স্ত্রী আদালতে বিয়ে বিচ্ছেদের আবেদন করতে পারে। অভিযোগ প্রমাণের দায়িত্ব স্ত্রীর। প্রমাণিত হলে স্ত্রী বিচ্ছেদের পক্ষে ডিক্রি পেতে পারে, আদালত বিচ্ছেদের ডিক্রি দেবার পর সাত দিনের মধ্যে একটি সত্যায়িত কপি আদালতের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যানের কাছে পাঠাবে।
১৯৬১ সনের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ অনুযায়ী চেয়ারম্যান নোটিশকে তালাক সংক্রান্ত নোটিশ হিসেবে গণ্য করে আইনানুযায়ী পদক্ষেপ নিবে এবং চেয়ারম্যান যেদিন নোটিশ পাবে সে দিন থেকে ঠিক নব্বই দিন পর তালাক চূড়ান্তভাবে কার্যকর হবে।
স্বামীর আদালত স্বীকৃত নিষ্ঠুর ব্যবহার সমূহ
ক) অভ্যাসগতভাবে স্ত্রীকে আঘাত করলে বা নিষ্ঠুর আচরণ করলে, উক্ত আচরণ দৈহিক পীড়নের পর্যায়ে না পড়লেও, তার জীবন শোচনীয় করে তুলেছে এমন হলে।
খ) স্বামী খারাপ মেয়ের সাথে জীবনযাপন করলে।
গ) স্ত্রীকে অনৈতিক জীবনযাপনে বাধ্য করলে।
ঘ) স্ত্রীর সম্পত্তি নষ্ট করলে।
ঙ) স্ত্রীকে ধর্মপালনে বাধা দিলে।
চ) একাধিক স্ত্রী থাকলে সকলের সাথে সমান ব্যবহার না করলে।
ছ) এছাড়া অন্য যে কোন কারণে (যে সকল কারণে মুসলিম আইনে বিয়ের চুক্তি ভঙ্গ করা হয়)।

লেখকঃ সাপ্তাহিক ‘সময়ের দিগন্ত’ পত্রিকার প্রকাশক-সম্পাদক ও আইনজীবী জজ কোর্ট, কুষ্টিয়া।
লিখেছেনঃ অ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিক

ইজমেন্ট বা সুখাধিকার




ইজমেন্ট বা সুখাধিকার বলতে এমন এক সুবিধাভোগী স্বত্বের অধিকারকে বুঝায় যা দ্বারা কোনো জমির মালিক
বা দখলকার তা জমির সুবিধাজনক ভোগের জন্য অপর কোনো ব্যক্তির জমির উপর দিয়ে কিছু করতে বা করা অব্যাহত রাখতে, কোনো কিছু নিবৃত্ত করতে বা নিবৃত্ত অব্যাহত রাখতে পারে । (১৯৮২ সালের ইজমেন্ট রাইট এক্ট এর ৪ ধারা ) এ অধিকার অর্জন সম্পর্কে ১৯০৮
সালের তামাদি আইনের ২৬ ধারায় বলা হয়েছে যে, কোনো ব্যক্তি শান্তিপূর্ণভাবে এবং প্রকাশ্যভাবে কোনো
ব্যক্তির ভূ-সম্পত্তি বাঁধাহীন ভাবে ও নিরবচ্ছিন্ন ভাবে ২০
বত্সর কাল ধরে ভোগ দখল করে থাকলে তাতে তার পথ চলার অধিকার জনিত স্বত্ব অর্জিত হয় । দখলের ভিত্তিতে মালিকানা দাবী যদি কোনো ব্যক্তি কোনো কৃষি
বা অকৃষি জমি শান্তিপূর্ণ ভাবে এবং কোনো ব্যক্তির
বাঁধাহীন ভাবে একটানা ১২ বছর নিরবচ্ছিন্ন ভাবে তার নিজের ভোগ দখলে রাখে তাহলে ঐ ব্যক্তি ভোগ দখলকৃত জমিটিতে মালিকানা দাবী
করতে পারে এবং ঐ জমিটি হতে বেদখলের হাত থেকে মুক্ত থাকতে পারেন । তবে জমিটি যদি সরকারের
জমি হয়ে থাকে তাহলে বেদখলের হাত থেকে মুক্ত থাকার জন্য এবং মালিকানা দাবীর জন্য জমিটিতে ৬০ বত্সর নিরবচ্ছিন্ন ভাবে দখলে থাকতে হবে । (১৯০৮
সালের তামাদি আইনের ২৯ ধারা) জবর দখলের
মাধ্যমে মালিকানা দাবী চরের জমি, খাসজমি বা অর্পিত/ পরিত্যক্ত সম্পক্তি একসনা লীজ নিয়ে ভোগ দখলরত থাকা অবস্থায় অনেকেই জমির মালিকানা দাবী করে আদালতে স্বত্বের মামলা দায়ের করে থাকেন ৷ যদিও একসনা লীজ কোনো টেনান্সী অধিকার সৃষ্টি করে না । নির্দিষ্ট সময় পরবা ৩০ শে চৈত্র তারিখে একসনা লীজভুক্ত জমির দখল সয়ংক্রিয় ভাবে সরকারের উপর
বর্তায় ৷ লীজ গ্রহীতা মনে করেন যে সরকারী জমি বা খাস জমিতে ১২ বত্সর দখলে থাকলেই ঐ জমির মালিক হওয়া যায় । কিন্তু প্রকৃত সত্য কথা হলো সরকারী জমিতে ৬০ বত্সর যাবত্ ভোগ দখল তথা জবরদখল বা “Adverse Possession” এর মাধ্যমে মালিকানা দাবী করা যায় । (১৯৯০ সালের

ভূমি ব্যবস্থাপনা ম্যানুয়াল ৯৬ ও ৯৭ অনুচ্ছেদ)
১২ বত্সর বা তার অধিককাল পর্যন্ত দখলে থাকার পর অধিকার ১২ বত্সর সংক্রান্ত ধারণাটি মূলত ১৯৪৯ সনের অকৃষি প্রজাস্বত্ব আইন থেকে এসেছে । এ আইনের ৬(২) ধারায় বলা হয়েছে একজন অকৃষি প্রজা কোনো ব্যক্তি কোনো ব্যক্তি মালিকানাধীন জমিতে ১২ বত্সর বা তার অধিককাল ধরে অবস্থান করলে সে উক্ত জমিতে নিম্নরূপ অধিকার ভোগ করতে পারবেন:
পাকা বাড়ী তৈরী করতে পারবে ;
যে কোনো ধর্মীয় উপাসনালয় তৈরী করতে পারবে;
পুকুর খুড়তে পারবে;
গাছ লাগিয়ে তার ফলফোগ করতে এবং উক্ত গাছ কর্তন/ বিক্রয় করতে পারবে ইত্যাদি ।
অধিকার জনসাধারণের চলাচলের জন্য রাস্তাঘাট ব্যবহারের অধিকার ।
টিউবওয়েল/কুপ/তারাপাম্প থেকে খাবার পানি ব্যবহারের অধিকার । পুকুর/জলাধারের পানি ব্যবহার
কিংবা সেখানে গোসলের অধিকার । আলো বাতাস চলাচলের জন্য গমনাগমনের পথ পাবার অধিকার ।
২০ বত্সর যাবত্ কোনো জমি ভোগ দখলের পর
তা স্বাধীন ভাবে ব্যবহারের অধিকার । সরকারী জমি হলে ৬০ বছরের বেশী সময় ধরে ব্যবহারের পর
স্বাধীন ভাবে ভোগ দখলের অধিকার । (১৮৮২ সালের
ইজমেন্ট রাইট এ্যাক্ট এর ৪ ধারা ) (১৯০৮ সালের
তামাদি আইনের ২৬ ধারা ) লঙ্ঘন সম্পত্তি অধিগ্রহণ
করা হবে মর্মে নোটিশ না পাওয়া ।অধিগ্রহণের বিরূদ্ধে আপত্তি দাখিলের সুযোগ না দেওয়া । আপত্তি দাখিলের জন্য আইনে বর্ণিত সময় না পাওয়া । সরকার কর্তৃক
সম্পত্তি অধিগ্রহণের চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপারে নোটিশ না পাওয়া। ক্ষতিপূরণের দাবী করার জন্য
আইনে নির্ধারিত সময় ও সুযোগ না পাওয়া । সম্পত্তিটি বর্গাদার বা বর্গাচাষীর হেফাজতে বা অধীনে থাকাকালীন অধিগ্রহণ হয়ে থাকলে বর্গাদারকে ক্ষতিপুরণ দাবী করার সুযোগ না দেওয়া । প্রকৃত বর্গাদারকে সম্পত্তি অধিগ্রহণের জন্য ক্ষতিপূরণ না দেওয়া । যে উদ্দেশ্যে সম্পত্তিটি অধিগ্রহণ করা হয়েছে সেই উদ্দেশ্যে সম্পত্তিটি ব্যবহার না করা ।

আইন অনুযায়ী পারিবারিক সহিংসতা রোধের উপায়



পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধে বাংলাদেশে ২০১০ সালে প্রনীত হয়েছে পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ ও সুরক্ষা আইন ২০১০যার ধারা ৩ অনুযায়ী পারিবারিক সহিংসতা বলতে “পারিবারিক সম্পর্ক রহিয়াছে এমন কোন ব্যক্তি কর্তৃক পরিবারের অপর কোন নারী বা শিশু সদস্যের ওপর শারীরিক নির্যাতন, মানসিক নির্যাতন, যৌন হয়রানি এবং আর্থিক ক্ষতি বুঝাইবে।” আইনটির প্রধান বৈশিষ্ট্য এই আইনটিতে জাতিসংঘের নারীর প্রতি বৈষম্য বিলোপ ঘোষণা ১৯৯৩-এর ওপর ভিত্তি করে পারিবারিক সহিংসতার একটি স্পষ্ট সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে। সহিংসতামুক্ত ও স্বাধীনভাবে বসবাস করতে পারাটা যে নারীর অধিকার সে বিষয়টিও স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। সহিংসতার শিকার নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাসস্থানের আদেশসহ অন্তর্বর্তীকালীন সুরক্ষা আদেশ প্রদানের সুযোগ রয়েছে। আদালত দু’পক্ষের শুনানির পর প্রয়োজন মনে করলে সহিংসতার শিকার ব্যক্তির নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সুরক্ষার আদেশ প্রদান এবং প্রদত্ত সুরক্ষার আদেশ পুনর্বিবেচনা করতে পারবেন। এছাড়াও এই আইনটিতে ক্ষতিপূরণ, হেফাজত, নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্র এবং স্থানের ব্যবস্থা, নিভৃত-কক্ষ বিচার কার্যক্রম, বিনা খরচে আদালতের আদেশের কপি পাওয়ার বিধান রাখা হয়েছে। বিলটিতে পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধে সরকার, প্রতিপালন কর্মকর্তা, সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের দায়দায়িত্ব সুনির্দিষ্ট করাসহ সেবা প্রদানকারি প্রতিষ্ঠানের সদস্যদের সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে গণ্য করার বিধান রয়েছে। এইধারা বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা পরিশিষ্টে দ্রষ্টব্য তবে এখানে এই আইনের গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় আলোচিত হয়েছে। যাদের জন্য আইন প্রযোজ্য ১। পারিবারিক সহিংসতার শিকার ব্যক্তি যিনি নারী অথবা শিশু হবেন; পারিবারিক সহিংসতা দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিবন্ধী শিশু; ২। পারিবারিক সহিংসতার শিকার ব্যক্তি যার সাথে অভিযুক্ত ব্যক্তির পারিবারিক সম্পর্ক রয়েছে। ৩। এদের পক্ষ হয়ে যে কেউ মামলা/অভিযোগ দায়ের করতে পারবেন। ৪। অভিযুক্ত পক্ষ পূর্ণবয়স্ক পুরুষ সদস্য যার সাথে সহিংসতার শিকার ব্যক্তির পারিবারিক সম্পর্ক রয়েছে; ৫। সহিংসতার শিকার নারীর স্বামী অথবা স্বামীর আত্মীয় নারী ও পুরুষ উভয় আত্মীয়ই হতে পারে। উত্তরণের উপায় ১। প্রথম শ্রেণীর ম্যজিস্ট্রেট অভিযোগের ওপর ভিত্তি করে অন্তর্বর্তীকালীন সুরক্ষা আদেশ অথবা অন্য কোনো আদেশ জারি করতে পারবেন; ২। এই আইনে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, সংশ্লিষ্ট প্রয়োগকারী কর্মকর্তা ও সহকারী প্রয়োগকারী কর্মকর্তা বা সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান অভিযোগ গ্রহণের পর সহিংসতার শিকার ব্যক্তিকে চিকিৎসা সেবা, আইনগত সহায়তাসহ অন্য সেবাগুলো প্রাপ্যতা সম্পর্কে অবহিত করবেন। আইনগত ক্ষমতা আইনটিতে ফৌজদারি ও দেওয়ানি উভয় আইনের মিশ্রণ ঘটেছে; আবেদনের ওপর ভিত্তি করে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সুরক্ষা আদেশ প্রদান করতে পারবেন; অভিযুক্ত ব্যক্তি আদেশ ভঙ্গ করলে আদালত গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি এবং গ্রেফতারপূর্বক জেলে প্রেরণ করতে পারবেন; ক্ষতিপূরণের ডিক্রি প্রদান করতে পারবেন; আবেদনকারী আবেদন করার পর বিজ্ঞ আদালত আবেদনপত্রটি বিবেচনায় নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সুরক্ষা আদেশ ও নোটিশ প্রদান (সাত দিনের মধ্যে কারণ দর্শানো) করবেন এবং পক্ষগুলোর মধ্যে শুনানির আয়োজন করে সুরক্ষা আদেশ (নোটিশ প্রদানের ৩০ দিনের মধ্যে) করবেন। মামলার বিবাদী পক্ষ রায় প্রদানের ৩০ দিনের মধ্যে চীফ জুডিশিয়াল ম্যজিস্ট্রেট বা ক্ষেত্রমত চীফ মেট্রোপলিটন ম্যজিস্ট্রেট আদালতে আপিল করতে পারবেন। আদেশ অবমাননার শাস্তির বিধান বিবাদীপক্ষ সুরক্ষা আদেশ লঙ্ঘন করিলে উহা অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয়ে অনধিক ৬ মাস কারাদণ্ড অথবা ১০,০০০ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন। বিবাদী যদি একই অপরাধের পুনরাবৃত্তি ঘটান সেক্ষেত্রে অনধিক ১২ মাস কারাদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে ২০,০০০ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে বিধান রাখা হয়েছে প্রস্তাবিত আইনে। এখানে উল্লেখ্য, অসত্য ও ভিত্তিহীন অভিযোগকারীর বিরুদ্ধেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের বিধান রাখা হয়েছে। আরও কিছু বিষয় ক্ষতিপূরণের ক্ষেত্রে আদালত সহিংসতার শিকার ব্যক্তির আঘাত অথবা ক্ষতি অথবা লোকসানের প্রকৃতি বিবেচনা করে ন্যায্য ও যৌক্তিক ক্ষতিপূরণের আদেশ দেবেন। সন্তানের সুরক্ষার জন্য সুরক্ষা আদেশ অথবা দাবিকৃত অন্যান্য প্রতিকারের আবেদন শুনানির যে কোনো পর্যায়ে সহিংসতার শিকার ব্যক্তি অথবা আবেদনকারীর অনুকূলে সন্তানের হেফাজত প্রদান করতে পারবেন। আপিল এই আইনে সংক্ষুব্ধ কোনো পক্ষ আপিল করতে পারবেন। তবে ক্ষতিপূরণের আদেশের বিরুদ্ধে আপিলের ক্ষেত্রে প্রতিপক্ষ তার বিরুদ্ধে প্রদত্ত ক্ষতিপূরণের আদেশের শতকরা ৫০ ভাগ অর্থ সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির অনুকূলে জমা প্রদানসাপেক্ষে আপিল করতে পারবেন। এতদিন অন্যান্য আইনের অধীনে পারিবারিক সহিংসতার অভিযোগ নিষ্পত্তি করা হতো। দীর্ঘ আন্দোলনের পর সরকার পারিবারিক নির্যাতনকে চিহ্নিত করে আলাদা আইন প্রণয়ন করতে যাচ্ছে। এই আইন যাতে সঠিকভাবে ব্যবহার হতে পারে সেজন্য সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে, এক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন হওয়া দরকার বিচার ব্যবস্থার। এই আইনের সদ্বব্যবহার করতে হবে নারীকেই। অন্যদিকে আইনের পাশাপাশি বাড়াতে হবে সমাজ সচেতনতা। পরিবর্তন আনতে হবে পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতায় ও দৃষ্টিভঙ্গিতে। তাহলে ভারসাম্যহীন সমাজ ব্যবস্থার ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে, সুদৃঢ় হবে সমাজে নারী অবস্থান। পারিবারিক সহিংসতামূলক ঘটনা দীর্ঘকাল ধরে চলে এলেও একবিংশ শতাব্দীর শেষপর্যায়ে বিষয়টি বৈশ্বিকপর্যায়ে বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার সমাজবিশেষজ্ঞ ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোর বিবেচনায় আসে। বাংলাদেশে যতরকম সহিংসতার ঘটনা ঘটে তার বেশিরভাগই পারিবারিক সহিংসতা এর প্রত্যক্ষ শিকার নারী এবং পরোক্ষ শিকার শিশু ও পরিবারের অন্য সদস্যরা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে শহরাঞ্চলের ৫৩ শতাংশ নারী ও গ্রামাঞ্চলের ৬২ শতাংশ নারী পরিবারে তাদের স্বামী এবং শ্বশুর বাড়ির আত্মীয়-স্বজন দ্বারা শারীরিক, মানসিক এবং যৌন নির্যাতনের শিকার হন। জাস্টিসমেকার্স বাংলাদেশের তথ্য অনুযায়ী ৪৩ শতাংশ নারী পারিবারিক সহিংসতার শিকার। এর মধ্যে ১১ শতাংশ যৌতুকবিষয়ক নির্যাতন। তবে মাঠপর্যায়ের প্রকৃত অবস্থা আরো নাজুক। পরিবারে শিশু নির্যাতনের হার ক্রমেই বেড়েই চলছে তা সে পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষ যেভাবেই হোক। এটি সর্বজনবিদিত যে পারিবারিক নির্যাতনে শিশুরা মারাত্মকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হয় এবং এর নেতিবাচক প্রভাবে তাদের মধ্যকার ক্ষত দীর্ঘস্থায়ী হয়। এতে একদিকে তারা মৌলিক অধিকারগুলো থেকে বঞ্চিত হয়, অন্যদিকে তাদের জীবনের নিরাপত্তা এবং স্বাভাবিক ও সাবলীলভাবে বেড়ে ওঠা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। শুধু নিম্নবিত্তই নয়, উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত ও শিক্ষিত নাগরিক সমাজের চার দেয়ালের মধ্যেও পারিবারিক সহিংসতার শিকার নিষ্পেষিত নারীর কান্না গুমরে ওঠে। অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য এই যে প্রকাশ্যে কিংবা লোকচক্ষুর অন্তরালে সংঘটিত এসব নির্যাতনের ঘটনা এখনো ব্যক্তিগত বিষয় বলে বিবেচিত হয়। এমনকি আইনপ্রয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলোও বিষয়টি পারিবারিক এবং ব্যক্তিগত বিষয় হিসেবে বিবেচনায় নেয়। ফলে নির্যাতনের শিকার নারী পুলিশ স্টেশন বা আদালতে যেতে তেমন ভরসা পায় না। কেননা সেখানেও তারা বিভিন্নভাবে হয়রানি বা পুনরায় নির্যাতনের শিকার হন। এছাড়া সামাজিকভাবেও তারা বিভিন্নরকম প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হন। বাংলাদেশ সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদে সব ক্ষেত্রে নারীর সমঅধিকারের কথা বলা হয়েছে। উপরন্তু নারীর অনগ্রসরতা বিবেচনায় ২৮ (৪) অনুচ্ছেদে নারী উন্নয়নের লক্ষ্যে নতুন আইন বা নীতি প্রণয়নের কথা বলা হয়েছে। এ অনুচ্ছেদের ভিত্তিতে প্রণীত হয়েছে পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন ২০১০। কেননা প্রচলিত আইনগুলোয় পারিবারিক সহিংসতা গুরুত্ব পায়নি এবং কোনোভাবেই এর প্রতিকার পাওয়া যায়নি। এছাড়া দ-বিধি বা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে অপরাধী বা অভিযুক্ত ব্যক্তিকে সরাসরি শাস্তি পেতে হয়। ফলে সমঝোতার আগেই পরিবারগুলো ভেঙে যায়; যা পরিবার এবং সমাজের জন্য হুমকি। এ পর্যায়ে এমন একটি আইনের প্রয়োজন দেখা দেয়, যে আইনের মাধ্যমে পরিবারে নারী ও শিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিত হয় এবং নারীর সমমর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয়। এ প্রেক্ষিতে প্রণীত হয় পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন, ২০১০ এবং এর বিধিমালা ২০১৩। এই আইন বাস্তবায়নের পথে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা রয়েছে যা সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে মোকাবেলা করতে হবে। প্রতিবন্ধকতাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হচ্ছে ১. পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন ২০১০ একটি নতুন আইন, তাই অধিকাংশ মানুষ এ আইন সম্পর্কে অবহিত নয়; ২. আইনটি কেবল পরিবারের সদস্যদের জন্য প্রযোজ্য, তাই এটি খুবই স্পর্শকাতর; ৩. আদালত, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রয়োগকারী কর্মকর্তাসহ সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের যথাযথ সমন্বয়হীনতা; ৪. প্রচলিত আইন এবং সমাজব্যবস্থায় তৈরি পুরাতন এবং প্রচলিত মানসিকতা; ৫. পুরুষতান্ত্রিক ধ্যানধারণা ও ৬. নারীর ক্ষমতায়নে বাধাগ্রস্ততা ইত্যাদি। উপরোল্লিখিত প্রতিবন্ধকতা দূর করার জন্য পারিবারিক পরিম-লে নারীদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করার (যেমন: পরিবারে পুরুষের পাশাপাশি নারীদেরও সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার প্রতিষ্ঠা করা) ক্ষেত্রে কাজ করতে হবে; পারিবারিক সুরক্ষা আইন ২০১০ ও এর বিধিমালা ২০১৩ এর ওপর সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, যেন আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং সাধারণ জনগণ এই আইন বাস্তবায়নে এবং পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে এবং কমিউনিটিকে নারী ও শিশু অধিকার সম্পর্কে অবহিত করার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদান এবং পারিবারিক নির্যাতনবিরোধী আইনগুলোর বাস্তবায়ন মনিটর করার মাধ্যমে এ আইনের কার্যকর প্রয়োগ নিশ্চিত করা সম্ভব। পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ ও সুরক্ষা আইন ২০১০-এর কার্যকর প্রয়োগে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, সুশীল সমাজ ও সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর পারিবারিক সহিংসতার শিকার সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির প্রতি বিশেষ গুরুত্ব প্রদানের মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখার সুযোগ রয়েছে। পারিবারিক সহিংসতার শিকার নারী ও শিশুরা আইনের আশ্রয় নেয়ার ক্ষেত্রে নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়ে থাকেন। এমনকি সহিংসতার ঘটনা পারিবারিক পরিম-লে সংঘটিত হওয়ায় ও আইনটি সম্পর্কে ধারণা না থাকায় অনেকেই আইনের আশ্রয় নিতে আগ্রহী হয়ে ওঠে না। তাই আইন প্রয়োগের দায়িত্বে নিয়োজিতদের জেন্ডার সংবেদনশীল হওয়া অত্যাবশ্যক। তাছাড়া পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ ও সুরক্ষা আইন ২০১০-এ সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির গোপনীয়তা রক্ষার পাশাপাশি আদালত কর্তৃক আশ্রয় প্রদানের মাধ্যমে সারভাইভারের আস্থার জায়গাটি সুদৃঢ় করার ব্যবস্থা এবং দ্রুততার সঙ্গে আইনি সহায়তা প্রদান করার যে কথা বলা হয়েছে, সে সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, সুশীল সমাজ ও রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঐক্যবদ্ধভাবে এ আইনের কার্যকর প্রয়োগের লক্ষ্যে গণসচেতনতা সৃষ্টি এবং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেয়ার লক্ষ্যে সরকার এবং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে অঙ্গীকারাবদ্ধ হতে হবে। পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ ও সুরক্ষা আইন বাস্তবায়নের জন্য কাজ করছে এমন সব প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিদের সঙ্গে সমন্বয় রক্ষা করে আলোচ্য আইনটির পাশাপাশি অপরাপর আইনের মাধ্যমে প্রতিকারের উপায়গুলো জানিয়ে দিতে হবে। সর্বোপরি এ আইনের প্রয়োগ এবং বাস্তবায়নে কার্যকর ভূমিকা রাখার মাধ্যমে নারীর প্রতি সব ধরনের বৈষম্য দূরীকরণে আইনের বাস্তবায়নে আরো সহজ-সরল কোনো নীতিমালা প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নের জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, সুশীল সমাজ ও রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলোকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। নারীর ক্ষমতায়ন ও ক্ষমতার মূল স্রোতধারায় নারীদের অংশগ্রহণ তখনই সম্ভব হবে যখন সমাজে নারী ও শিশুর ওপর সহিংসতার মাত্রা কমে যাবে এবং নারীদের অবস্থানের উন্নতি হবে। একই সঙ্গে জাতীয় জীবনে পুরুষের পাশাপাশি নারীর সমঅধিকার এবং সমান অংশগ্রহণের অধিকার নিশ্চিত করার মাধ্যমে দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে। দেশব্যাপী হত্যা, অ্যাসিড নিক্ষেপ, ধর্ষণ, নারী পাচার ইত্যাদির মতো ঘটনা বাড়ছে উদ্বেগজনক হারে। বতমান সরকার এসব দমন বা নিয়ন্ত্রণে গ্রহণ করছে নানা পদক্ষেপ কিন্তু কিছুতেই কমছে না সহিংসতামূলক ঘটনা। এখন অনেক পরিবারের সদস্যও নিজ পরিবারে নিরাপদ নয়। অর্থাৎ দেশে অরক্ষিত পরিবারের সংখ্যাও বাড়ছে উদ্বেগজনক হারে। একের পর এক পারিবারিক সহিংসতার খবরে এখন অনেকেই ভীতসন্ত্রস্ত। এখন কথা হলো, নিজ পরিবারই যদি মানুষের জন্য নিরাপদ বা সুরক্ষিত স্থান না হয় তবে মানুষ যাবে কোথায়? বিভিন্ন মাধ্যমে বলা হয়ে থাকে, পরিবারের সদস্য হচ্ছে মানুষের রক্ষাকবচের অন্যতম স্থান। তবে পারিবারিক সহিংসতা বাড়ার কারণে এখন আর এমনভাবে কিছুই বলা হচ্ছে না। মানুষের জন্য পরিবার এমনই একটি জায়গা বা স্থান যার সদস্যরা একে অপরকে রক্ষা করে বিভিন্ন সমস্যা বা নিরাপত্তাহীনতা থেকে। সন্তানদের জন্য অন্যতম ভরসা হচ্ছে বাবা-মা। বিয়ের পর মেয়েদের জন্য অন্যতম নিরাপদ স্থান হয় স্বামীর ঘর। আর স্বামী-স্ত্রীর রক্ষাকবচ। কিন্তু বিভিন্ন কারণে পারিবারিক সহিংসতা বাড়ায় পরিবারের অনেকেই অনেক ব্যাপারেই এখন কেন নিরূপায়। এর মূল কারণ হলো পরিবারের সদস্যদের মধ্যে পারস্পরিক বিশ্বাস, শ্রদ্ধা, ভালবাসা ইত্যাদি কমে আসছে। স্ত্রী সন্দেহ করছে স্বামীকে, স্বামী সন্দেহ করছে স্ত্রীকে, মা-বাবা সন্দেহ করছে ছেলেমেয়েকে। সন্দেহের প্রথম পর্যায়ে এর পরিণতি সম্বন্ধে তেমন কিছুই বুঝা যায় না। কিন্তু দিনের পর দিন তা গড়ায় চরম পরিণতির দিকে। অর্থাৎ এসব ক্রমেই সহিংসতায় রূপ নেয়। কিছুদিন আগে পারিবারিক দ্বনেদ্ব ঢাকার জুরাইনে দুই সন্তান পায়েল ও পাবনকে সাথে নিয়ে আত্মহত্যা করেছেন গৃহবধূ ফারজানা রীতা। এ নিয়ে অনেকদিন লেখালেখি হয়েছে পত্র-পত্রিকায়। দেশের সকল স্তরের মানুষ ঘটে যাওয়া এমন একটি পারিবারিক সহিংসতাকে ধিক্কার না জানিয়ে পারলো না। কয়েক দিন যেতে না যেতেই দুই সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে আগুন লাগিয়ে আত্মহুতি দিয়েছেন কমলাপুরে বিলাসী নামে এক গৃহবধূ। এ ধরনের ঘটনা হয়তো দেশের বিভিন্ন স্থানে আরো ঘটছে, কিন্তু সব খবর তো আর মিডিয়া বা আইনের লোকের কাছে পৌঁছে না। না হলে হয়তো প্রতিদিনই এ ধরনের পারিবারিক সহিংসতার খবর পত্র-পত্রিকায় ছাপা হতো। হত্যা, অ্যাসিড নিক্ষেপ, ধর্ষণ, নারী পাচার ইত্যাদির মতো অপরাধে শাস্তির বিধান দেশের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০৩-এ থাকলেও পারিবারিক সহিংসতা ও পারিবারিক নির্যাতনের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট শাস্তির ধারা বা সুনির্দিষ্ট অপরাধের ধারা উক্ত দন্ডবিধিতে তেমনভাবে উল্লেখ নেই। যে কারণে অনেকে পারিবারিক সহিংসতা ঘটিয়ে সহজেই পার পেয়ে যাচ্ছে। এদের খুব একটা শাস্তির নজির দেখা যাচ্ছে না বলে ক্রমে বাড়ছে পারিবারিক সহিংসতা। যা ক্রমে বাড়াচ্ছে সামাজিক সমস্যা। এর চরম নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে আইন-শৃক্মখলা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে। বর্তমান সরকার এসব সহিংসতা নিয়ন্ত্রণে বা রোধে প্রণয়ন করতে যাচ্ছে পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ আইন। ইতোমধ্যে পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) বিল, ২০১০ নামে আইনটির বিল উপস্থাপন করা হয়েছে জাতীয় সংসদে। বিলটি আগামী অধিবেশনে পাস হবে বলে জানা গেছে। বিলটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা বা যাচাই-বাছাইয়ের জন্য পাঠানো হয়েছে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটিতে। উল্লেখ্য, সাম্প্রতিকালে দেশে নারী নির্যাতনের বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। তাতে বেশ কয়েকজনের মৃত্যু ও আহত হওয়ার খবর দেশের মানুষ জানতে পেরেছে। সে কারণে সরকারের নীতিনির্ধারকদের অনেকেই তা দ্রুত পাস করার পক্ষে মত দেন। বিলটিতে যাতে কোনো ফাঁক-ফোকর না থাকে সেদিকেও লক্ষ্য রাখার দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। জানা গেছে, কাউকে শাস্তি প্রদান করা বা আটক রাখার চিন্তা থেকে করা হচ্ছে না আইনটি। তবে এ সংক্রান্ত মিথ্যা মামলা কেউ দায়ের করলে তার বিরুদ্ধে গ্রহণ করা হবে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা। অনেকের অভিমত হচ্ছে, পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধে উক্ত আইন পাস হলেও তা প্রকৃতপক্ষে তেমন কাজে আসবে না। কারণ প্রকৃত অপরাধীকে শাস্তি প্রদান করা বা আটক করাই এর প্রধান উদ্দেশ্য নয়। এতে করে হয়তো অনেক ধরনের ফাঁক-ফোকর থেকেই যাবে। পার পেয়ে যাবে প্রকৃত অপরাধীরা। তথ্য সংগ্রহ: তথ্য আপা প্রকল্প সংগ্রহ: ইন্টারনেট।

29 November 2018

মিথ্যা মামলা দায়ের ও সাক্ষ্য প্রদানে আইনি বিধান এবং শাস্তি




নুরে আলম:
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ২৭ নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, “ সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনে সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী”। সংবিধান বাংলাদেশের জনগণকে এই অধিকার দিয়েছে। বাংলাদেশের কোন আইন দ্বারা এই অধিকার খর্ব করা যাবে না। প্রতিনিয়ত আদালতে মানুষ আসে বিভিন্ন ধরনের দেওয়ানী ও ফৌজদারি প্রতিকার পেতে। আদালতের প্রতি মানুষের আস্থা আছে বলেই ব্যক্তির সাথে ব্যক্তির এবং ব্যক্তির সাথে প্রতিষ্ঠানের কোন ঝামেলা হলে বলে, “ কোর্টে দেখা হবে”।
আইন বিজ্ঞানের সাধারণ নীতি হলো “ দশ জন অপরাধী ছাড়া পেলেও যেন একজন নিরপরাধ ব্যক্তির সাজা না হয়”। আইনের চোখ অন্ধ, আইন কার্যকর করতে হলে প্রমাণের প্রয়োজন। দেওয়ানী ও ফৌজদারি  মামলা প্রমাণের পরিমাণ বা মাত্রার দুইটি মানদণ্ড আছে।
১) ফৌজদারি মানদণ্ড যা যুক্তি সংগত সন্দেহের ঊর্ধ্বে প্রমাণ বা সন্দেহাতীত প্রমাণ (Proof Beyond reasonable doubt) বলে গণ্য হয় ;
২) দেওয়ানী মানদণ্ড যা সম্ভাব্য ভারসাম্য পূর্বক প্রমাণ ( On balance of probabilities) করা।
বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত মিথ্যা মামলা হচ্ছে এবং আদালতে মামলা প্রমাণ করার জন্য সাক্ষী অপরিহার্য। তাই অনেকে মিথ্যা মামলা  প্রমাণ করার জন্য মিথ্যা সাক্ষীর ব্যবস্থা করে। যদি কোন ব্যক্তি মিথ্যা মামলা বা মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে আদালতে আসে তার জন্য আইনে রয়েছে সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান। বাংলাদেশে অতি সুপরিচিত আইন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ এর সাথে সবাই কম বেশি পরিচিত। এই আইনে মামলা হলে সে মামলার জামিন দেয়ার এখতিয়ার নিম্ন আদালতের নেই। এই আইনে মিথ্যা মামলার শাস্তি সম্পর্কে বলা আছে। এই আইনের ১৭ ধারায় বলা হয়েছে, “ যদি কোন ব্যক্তি অন্য  কোন ব্যক্তির ক্ষতি সাধনের অভিপ্রায়ে উক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে এই আইনের অন্য কোন ধারার অধীন মামলা বা অভিযোগ করার জন্য ন্যায্য বা আইনানুগ কারণ নাই  জেনেও মামলা বা অভিযোগ দায়ের করেন বা করায় উক্ত ব্যক্তির সাত বছর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন এবং ইহার অতিরিক্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন”। এই রক্ষাকবচ থাকা সত্ত্বেও এই আইনে মিথ্যা মামলা দায়ের করা বন্ধ হয়নি। এছাড়া মিথ্যা মামলা সম্পর্কে ফৌজদারি কার্যবিধি এবং দণ্ডবিধিতে শাস্তির বিধান রয়েছে।
ফৌজদারি কার্যবিধি ২৫০ ধারায় মিথ্যা মামালার শাস্তির বিধান রয়ছে। ২৫০ ধারা অনুযায়ী, “ম্যাজিস্ট্রেট যদি আসামীকে খালাস দেওয়ার সময় প্রমাণ পান যে মামলাটি মিথ্যা ও হয়রানীমূলক তাহলে ম্যাজিস্ট্রেট বাদীকে কারণ দর্শানোর নোটিশসহ ক্ষতিপূরণের আদেশ  দিতে পারেন”।
দণ্ডবিধির ২০৯ ধারা মতে, “মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করলে সর্বোচ্চ দুই বছর কারাদণ্ড সহ অর্থ দণ্ডে দণ্ডিত হবে”। আবার ২১১ ধারায় মিথ্যা ফৌজদারি মামলা দায়ের করার শাস্তি বলা হয়েছে, “যদি কোন ব্যক্তি কোন ব্যক্তির ক্ষতিসাধনের অভিপ্রায়ে উক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে ফৌজদারি মোকদ্দমা দায়ের করে তবে মামলা দায়ের কারীকে দুই বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ডে বা উভয়বিধ দণ্ডে দণ্ডিত হবে”।
দণ্ডবিধির ১৯১ ধারা থেকে ১৯৬ ধারা পর্যন্ত মিথ্যা সাক্ষ্য দান, মিথ্যা সাক্ষ্য সৃষ্টি এবং মিথ্যা সাক্ষ্য দানের শাস্তি সম্পর্কে বলা আছে।
দণ্ডবিধির ১৯১ ধারায় মিথ্যা সাক্ষ্য দানের সংজ্ঞা সম্পর্কে বলা আছে, “যদি কোন ব্যক্তি সত্য কথনের জন্য হলফ বা আইনের প্রকাশ্য বিধান বলে আইনত: বাধ্য হয়ে বা কোন  বিষয়ে কোন ঘোষণা করার জন্য আইনবলে বাধ্য হয়ে এরূপ কোন বিবৃতি প্রদান করে, যা মিথ্যা এবং যা সে  মিথ্যা বলে জানে বা বিশ্বাস করে বা সত্য বলে বিশ্বাস করে না, তা হলে উক্ত ব্যক্তি মিথ্যা সাক্ষ্য দেয় বলে পরিগনিত হবে”। কোন বিবৃতি মৌখিক বা অন্য কোন ভাবে দেওয়া হোক না কেন তা এ ধারায় অন্তর্ভুক্ত হবে।
দণ্ডবিধির ১৯৩ ধারায় মিথ্যা সাক্ষ্য দানের শাস্তি সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, “যদি কোন ব্যক্তি কোন বিচার বিভাগীয় মোকদ্দমায় কোন পর্যায়ে ইচ্ছাকৃত ভাবে মিথ্যা সাক্ষ্য দেয় বা মিথ্যা সাক্ষ্য সৃষ্টি করে তাহলে  সেই ব্যক্তির যে কোন বর্ণনার কারাদণ্ড-যার মেয়াদ সাত বছর পর্যন্ত হতে পারে- দণ্ডিত হবে এবং তদুপরি অর্থদণ্ডে দণ্ডনীয় হবে,  যদি অন্য কোন মামলায় ইচ্ছাকৃত ভাবে মিথ্যা সাক্ষ্য দিলে তার শাস্তি তিন বছরের কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ডে দণ্ডনীয় হবে।
মিথ্যা সাক্ষ্য দানের জন্য মৃত্যুদণ্ড শাস্তির বিধান রয়েছে। দণ্ডবিধির ১৯৪ ধারা অনুযায়ী, “ যদি কোন ব্যক্তি মিথ্যা সাক্ষ্য  দেওয়া বা উদ্ভাবন করা যার উপর ভিত্তি করে নির্দোষ ব্যক্তি মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হলে এবং মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হলে, যে মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়েছে তাকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেওয়া যাবে”।
মিথ্যা মামলা ও মিথ্যা সাক্ষ্য একটি সামাজিক ব্যাধি যার ফলে আদালতে নিরীহ ব্যক্তি যেমন হয়রানি ও শাস্তির শিকার হয় তেমনি এই দুইটি আদালতকে ন্যায় বিচার প্রদানে বাঁধা প্রদান করে। যেহেতু মিথ্যা মামলা ও মিথ্যা সাক্ষ্য প্রমাণিত হলে শাস্তির ব্যবস্থা আছে তাই সকলের মিথ্যা মামলা ও মিথ্যা সাক্ষ্য পরিহার করা উচিৎ এবং সব সময় আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা উচিৎ।
 লেখক: শিক্ষানবিশ আইনজীবী এবং তদন্ত কর্মকর্তাসোসাইটি ফর হিউম্যান রাইটস

28 November 2018

দণ্ডবিধিতে নারীর অধিকার


নুরে আলম
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম  তার কবিতায় বলে গেছেন,’বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর।’
আইনের দৃষ্টিতে সকল নাগরিক সমান । আধুনিক সমাজ ব্যবস্থায় নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় রাষ্ট্র সর্বদা সচেতন।  নারীরা শারীরিক ভাবে পুরুষের চেয়ে কম শক্তিশালী বলে তারা বিভিন্ন ভাবে নির্যাতনের শিকার হয়। প্রতিটি রাষ্ট্রে নারী সুরক্ষায় তাদের নিজস্ব আইন রয়েছে। বাংলাদেশও নারী অধিকারে কঠোর আইন ও নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০, বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন, ২০১৭,যৌতুক নিরোধ আইন ১৯৮০,  জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি- ২০১১  ইত্যাদি। সকল প্রকার অপরাধ কে প্রতিহত করার  মূল ও আদি আইন হল দণ্ড বিধি ১৮৬০। যদিও ব্রিটিশ শাসন আমলের এই আইন আমাদের এই উপমহাদেশে কার্যকর হয় তবুও আমারা এই আইন মেনে চলছি। তাই সকল প্রকার যুক্তির উপরে বলা যায় দণ্ডবিধি এখন আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় কার্যকর বলেই আমরা দণ্ডবিধি মেনে চলি। দণ্ডবিধিতে নারীদের সুরক্ষার জন্য বেশ কয়েকটি শক্তিশালী ধারা রয়েছে। নারী সুরক্ষায় মৃত্যুদণ্ডের বিধান পর্যন্ত রয়েছে। দণ্ডবিধি পর্যালোচনা করলে  নারী সুরক্ষায় যে সকল বিধান পাওয়া যায় সেগুলো যদি আইনি ব্যবস্থায় ও সমাজে যথাযথ ভাবে প্রয়োগ করা সম্ভব হয় তবে আর আমাদের আর কোন দিন নারী নির্যাতনের ঘটনা শুনতে হবে না। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম পাবে নারী নির্যাতন মুক্ত সুন্দর সমাজ ।  আমাদের সকলের দণ্ডবিধির ধারা গুলো জানা প্রয়োজন ।
দণ্ডবিধির ৩১২ ধারায় গর্ভপাত মৃত্যু  সম্পর্কে বলা হয়েছে, কোন ব্যক্তি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে গর্ভবতী স্ত্রীলোকের গর্ভপাত করায়, এবং যদি সে গর্ভপাত সরল বিশ্বাসে উক্ত স্ত্রীলোকের জীবন বাঁচাবার উদ্দেশ্যে না করা হয়ে থাকে, তবে সে ব্যক্তি তিন বৎসর পর্যন্ত যেকোনো মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে, অথবা অর্থ দণ্ডে, অথবা উভয়বিধ দণ্ডেই দণ্ডিত হবে; এবং যদি স্ত্রীলোকটি শিশুর বিচরণ অনুভব করে, তবে সে ব্যক্তি সাত বৎসর পর্যন্ত যেকোনো মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবে, এবং তদুপরি অর্থ দণ্ডেও দণ্ডিত হবে।ব্যাখ্যা যে স্ত্রীলোক নিজেই নিজের অকাল গর্ভপাত করায়, সে স্ত্রীলোকও এই ধারার অর্থের অন্তর্ভুক্ত হবে।
দণ্ডবিধির ৩১৩ ধারায় স্ত্রীলোকের সম্মতি ছাড়া গর্ভপাত সম্পর্কে বলা হয়েছে, কোন ব্যক্তি যদি পূর্ববর্তী ধারায় বর্ণিত অপরাধটি সংশ্লিষ্ট স্ত্রীলোকের সম্মতি ছাড়া সম্পাদন করে-স্ত্রীলোকটি আসন্ন প্রসব হোক বা না হোক- তবে সে ব্যক্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে অথবা দশ বৎসর পর্যন্ত যে কোন মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবে এবং তদুপরি অর্থ দণ্ডেও দণ্ডিত হবে।
দণ্ডবিধির  ৩১৪ ধারায় গর্ভপাত করানোর উদ্দেশ্যে কৃত কাজের ফলে মৃত্যু  সম্পর্কে বলা হয়েছে, কোন ব্যক্তি যদি কোন গর্ভবতী স্ত্রীলোকের গর্ভপাত করানোর উদ্দেশ্যে কৃত কোন কাজের ফলে সে স্ত্রীলোকটির মৃত্যু ঘটায়, তবে সে ব্যক্তি দশ বৎসর পর্যন্ত যেকোনো মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবে, এবং তদুপরি অর্থ দণ্ডেও দণ্ডিত হবে।   যদি কাজটি সে স্ত্রীলোকটির সম্মতি ছাড়া করা হয়ে থাকে, তবে সে ব্যক্তি হয় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে, কিংবা উপরোল্লিখিত দণ্ডে দণ্ডিত হবে।
দণ্ডবিধির ৩৬৬ ধারায় কোন নারীকে বিবাহ ইত্যাদিতে বাধ্য করার অভিপ্রায়ে অপহরণ বা হরণ বা প্রলুব্ধকরণ সম্পর্কে বলা হয়েছে, কোন ব্যক্তি যদি কোন নারীকে অপহরণ করে এবং অপহরণ করার উদ্দেশ্য হয় অথবা অপহরণ করার ফলে এইরূপ হবে জানে যে, সে নারীকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোন ব্যক্তিকে বিবাহ করতে বাধ্য করা অথবা তাকে অবৈধ সহবাসে জোরপূর্বক বা ফুসলিয়ে বাধ্য করা অথবা তাকে জোরপূর্বক, বা ফুসলিয়ে অবৈধ সহবাসে বাধ্য করা হতে পারে জানা সত্ত্বেও যদি তাকে অপহরণ করা হয়, তবে সে ব্যক্তি দশ বৎসর পর্যন্ত যেকোনো মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবে এবং তদুপরি অর্থ দণ্ডেও দণ্ডিত হবে।
দণ্ডবিধির ৩৭২ ধারায়  বেশ্যাবৃত্তি, প্রভৃতির উদ্দেশ্যে অপ্রাপ্তবয়স্কদের বিক্রয় সম্পর্কে বলা হয়েছে , কোন ব্যক্তি যদি আঠারো বৎসরের নিম্নবয়স্ক কোন ব্যক্তিকে বিক্রয় করে, ভাড়া দেয় বা অপর কোনভাবে বিলিব্যবস্থা করে এই উদ্দেশ্যে যে অথবা এটা জানা সত্ত্বেও যে, অনুরূপ ব্যক্তিকে কোন বিশেষ বয়সে বেশ্যাবৃত্তিতে বা অপর কোন ব্যক্তির সাথে অবৈধ সহবাসে কিংবা কোন বেআইনী ও নীতিবিগর্হিত কাজে ব্যবহৃত বা নিয়োজিত করা হবে, তবে সে ব্যক্তি দশ বৎসর পর্যন্ত যেকোনো মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবে এবং তদুপরি অর্থ দণ্ডেও দণ্ডিত হবে।
দণ্ডবিধির ৩৭৫  ধারায়  ধর্ষণ সম্পর্কে বলা হয়েছে, কোন পুরুষ অতঃপর উল্লেখিত ব্যতিক্রম ভিন্ন অপর সকল ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত পাঁচটি যেকোনো অবস্থায় কোন স্ত্রীলোকের সাথে যৌনসঙ্গম করলে সে ধর্ষণ করেছে বলে পরিগণিত হবে।
প্রথমত:-  স্ত্রীলোকটির ইচ্ছার বিরুদ্ধে ।
দ্বিতীয়ত:-  স্ত্রীলোকটির সম্মতি ব্যতিরেকে।
তৃতীয়ত:-স্ত্রীলোকটির সম্মতিক্রমেই, যেক্ষেত্রে মৃত্যু বা জখমের ভয় প্রদর্শন করে স্ত্রীলোকটির সম্মতি আদায় করা হলে।
চতুর্থত-  স্ত্রীলোকটির সম্মতিক্রমেই, যেক্ষেত্রে পুরুষটি জানে যে, সে স্ত্রীলোকটি স্বামী নয়, এবং পুরুষটি ইহার জানে যে, স্ত্রীলোকটি তাকে এমন অপর একজন পুরুষ বলে ভুল করেছে, যে পুরুষটির সাথে সে আইন সম্মত ভাবে বিবাহিত হয়েছে বা বিবাহিত বলে বিশ্বাস করে ।
পঞ্চমত:-  স্ত্রীলোকটির সম্মতিক্রমে অথবা সম্মতি ব্যতিরেকে, যতি স্ত্রীলোকটির বয়স চৌদ্দ বৎসরের কম হয়।
দণ্ডবিধির ৩৭৬ ধারায় ধর্ষণের সাজা সম্পর্কে বলা হয়েছে ,  কোন ব্যক্তি যদি ধর্ষণের অপরাধ করে, তবে সে ব্যক্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে, অথবা দশ বৎসর পর্যন্ত যেকোনো মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবে, এবং তদুপরি অর্থ দণ্ডেও দণ্ডিত হবে, যদি না ধর্ষিত স্ত্রীলোকটি তার নিজ স্ত্রী হয় ও বারো বৎসরের কম বয়স্কা না হয়; যদি তদ্রূপ হয়, তবে সে ব্যক্তি দুই বৎসর পর্যন্ত যে কোন মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে অথবা অর্থ দণ্ডে অথবা উভয়বিধ দণ্ডেই দণ্ডিত হবে।
দণ্ডবিধির ৪৯৩ ধারায় কোন ব্যক্তি দ্বারা প্রতারণামূলকভাবে আইনসম্মত বিবাহের বিশ্বাসে প্ররোচিত করে স্বামী-স্ত্রীরূপে সহবাস করা সম্পর্কে বলা হয়েছে ,   কোন ব্যক্তি যদি যে নারী তার সাথে আইন সম্মত ভাবে বিবাহিত নয় সে নারীকে প্রতারণামূলক ভাবে বিশ্বাস করায় যে, সে নারী তার সাথে আইনসম্মত ভাবে বিবাহিত এবং সে নারীকে এই বিশ্বাসের বশবর্তী হয়ে তার সাথে সহবাসে বা যৌন সঙ্গমে প্রবৃত্ত করে, তবে উক্ত ব্যক্তি দশ বৎসর পর্যন্ত যেকোনো মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবে এবং তদুপরি অর্থ দণ্ডেও দণ্ডিত হবে।
দণ্ডবিধির ৪৯৪ ধারায় স্বামী বা স্ত্রীর জীবদ্দশায় পুনরায় বিবাহ করা সম্পর্কে বলা হয়েছে ,  কোন ব্যক্তি যদি এক স্বামী বা এক স্ত্রী জীবিত থাকা সত্ত্বেও এমন কোন পরিস্থতিতে বিবাহ করে, যে পরিস্থিতিতে স্বামী বা স্ত্রী জীবিত থাকা অবস্থায় সংঘটিত বলে অনুরূপ বিষয়টি অবৈধ হয়েছে, তবে উক্ত ব্যক্তি সাত বৎসর পর্যন্ত যেকোনো মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবে এবং তদুপরি অর্থ দণ্ডেও দণ্ডিত হবে। স্বামী বা স্ত্রীর জীবদ্দশায় পুনরায় বিবাহ করা সম্পর্কে কিছু ব্যতিক্রম রয়েছে।
দণ্ডবিধির ৪৯৫ ধারায় যে ব্যক্তির সঙ্গে পরবর্তী বিবাহের চুক্তি সম্পাদিত হয় তার কাছে পূর্ববর্তী বিবাহের তথ্য গোপন রেখে উক্ত অপরাধ সংঘটন সম্পর্কে বলা হয়েছে  , কোন ব্যক্তি যদি পরবর্তী বিবাহের চুক্তি যার সাথে সম্পাদিত করা হল তার নিকট থেকে পূর্ববর্তী বিবাহ সম্পর্কিত তথ্য গোপন রেখে পূর্ববর্তী সর্বশেষ ধারায় উল্লেখিত অপরাধ সংঘটন করে, তবে উক্ত ব্যক্তি দশ বৎসর যেকোনো মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবে এবং তদুপরি অর্থ দণ্ডেও দণ্ডিত হবে।
দণ্ডবিধির ৪৯৬ ধারায় আইনসম্মত বিবাহ সম্পাদন ছাড়াই প্রতারণামূলক ভাবে বিবাহ অনুষ্ঠান সম্পন্ন করা সম্পর্কে বলা হয়েছে ,  কোন ব্যক্তি যদি অসাধুভাবে বা প্রতারণামূলক উদ্দেশ্য নিয়ে সে আইনত: বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হচ্ছে না জানা সত্ত্বেও বিবাহের অনুষ্ঠান সম্পন্ন করে, তবে উক্ত ব্যক্তি সাত বৎসর পর্যন্ত যেকোনো মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবে এবং তদুপরি অর্থ দণ্ডেও দণ্ডিত হবে।
দণ্ডবিধির  ৪৯৭ ধারায় ব্যভিচার সম্পর্কে বলা হয়েছে ,  কোন ব্যক্তি যদি অপর কোন ব্যক্তির স্ত্রী অথবা যাকে সে অন্য কোন ব্যক্তির স্ত্রী বলে জানে বা তার অনুরূপ বিশ্বাস করার কারণ আছে এমন কোন ব্যক্তির সাথে উক্ত অন্য ব্যক্তির সম্মতি ও সমর্থন ছাড়া এইরূপ যৌন সঙ্গম করে যা নারী ধর্ষণের সামিল নয়, তবে সে ব্যক্তি ব্যভিচারের অপরাধের জন্য দোষী হবে এবং তাকে সাত বৎসর পর্যন্ত যেকোনো মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে অথবা অর্থ দণ্ডে, অথবা উভয়বিধ দণ্ডেই দণ্ডিত করা যাবে। অনুরূপ ক্ষেত্রে স্ত্রী ব্যক্তিটি দুষ্কর্মের সহায়তাকারী হিসেবে দণ্ডিত হবে না।
দণ্ডবিধির ৪৯৮ ধারায় কোন বিবাহিতা নারীকে অপরাধমূলক উদ্দেশ্যে প্রলুব্ধ করা বা অপহরণ বা আটক করা   সম্পর্কে বলা হয়েছে,  কোন ব্যক্তি যদি যে নারী অপর পুরুষের সাথে বিবাহিতা এবং তা সে জানে বা তার অনুরূপ বিশ্বাস করার কারণ রয়েছে, এইরূপ নারীকে কোন ব্যক্তির সাথে অবৈধ যৌনসঙ্গম করার উদ্দেশ্যে বিবাহিত পুরুষের নিকট থেকে বা সে পুরুষের স্বপক্ষে অপর যে ব্যক্তি সে নারীর তত্ত্বাবধায়ক সে ব্যক্তির নিকট থেকে অপহরণ বা প্রলুব্ধ করে নিয়ে যায়, বা অনুরূপ কোন নারীকে উপযুক্ত উদ্দেশ্যে গোপন বা আটক করে, তবে সে ব্যক্তি দুই বৎসর পর্যন্ত যে কোন মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে, অথবা অর্থ দণ্ডে, অথবা উভয়বিধ দণ্ডেই দণ্ডিত হবে।
দণ্ডবিধির ৫০৯ ধারায় কোন নারীর শীলতাহানির  সম্পর্কে বলা হয়েছে, কোন ব্যক্তি যদি কোন নারীর শীলতাহানির উদ্দেশ্যে সে নারী যাতে শুনতে পায় এমন কোন কথা বলে বা শব্দ করে অথবা সে নারী যাতে দেখতে পায় এমন ভাবে কোন অঙ্গভঙ্গি করে বা কোন বস্তু প্রদর্শন করে অথবা অনুরূপ নারীর গোপনীয়তা অনধিকার লঙ্ঘন করে, তবে সে ব্যক্তি এক বৎসর পর্যন্ত যেকোনো মেয়াদের বিনাশ্ৰম কারাদণ্ডে অথবা অর্থ দণ্ডে, অথবা উভয়বিধ দণ্ডেই দণ্ডিত হবে।
এই সকল ধারা নারী সুরক্ষার জন্য দণ্ডবিধিতে রয়েছে। তবুও সামাজিক কারণে আইন সঠিক ভাবে কার্যকর হতে পারে না। আইন কে সঠিক ভাবে কার্যকর করতে হলে প্রথমে আমাদের নিজেদের কে নিজের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হতে হবে এবং নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজন, আইনের প্রয়োগ ও ইতিবাচক সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রসার। আমদের পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় পুরুষদের মানসিকতা পরিবর্তন করলেই আমাদের সমাজ হতে নারী নির্যাতন অনেকাংশে নির্মূল হবে।
লেখক: শিক্ষানবিশ আইনজীবী এবং তদন্ত কর্মকর্তা, সোসাইটি ফর হিউম্যান রাইটস

03 October 2018

আইনের ধারা মনে রাখার সহজ উপায়

একজন সাধারণ ব্যক্তি এবং একজন আইন বিষয়ে অভিজ্ঞ ব্যক্তির মধ্যে প্রধান পার্থক্য হল একজন সাধারণ ব্যক্তি জানেন কোনটা অপরাধ আর কোনটা অপরাধ নয় কিন্তু আইন বিষয়ে অভিজ্ঞ ব্যক্তি একই বিষয় জানার সাথে জানেন কোন আইনের কত ধারায় সেই বিষয়ে বলা আছে। কোন আইনের কোন ধারা জানেন বলেই তিনি অভিজ্ঞ। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ৩ হাজারের বেশি আইন রয়েছে। সব আইনের সব ধারা মনে রাখা দুঃসাধ্য ব্যাপার তবে আইনকে পেশা হিসেবে নিলে অন্তত কোন কোন আইনে কি রয়েছে সেটা মনে রাখতে হবে।
একেবারে সঠিক ধারা মনে রাখা প্রয়োজন আইনের ছাত্রদের জন্য কারণ তারা আইন বিষয়ে ডিগ্রী নেওয়ার পর ২টি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হয়। একটি হল জুডিসিয়াল  সার্ভিস পরীক্ষা আর অন্যটি হল আইনজীবী নিবন্ধন পরীক্ষা। জুডিসিয়াল  সার্ভিস পরীক্ষায় নির্বাচিত হলে আপনি সহকারী জজ হিসাবে নিয়োগ পাবেন আর আইনজীবী নিবন্ধন পরীক্ষা পাস করলে আপনি আদালতে আইনজীবী হিসাবে কাজ করার অনুমতি পাবেন। আইনের সকল শিক্ষার্থীর একটা সাধারণ প্রশ্ন হল “আইনের ধারা কিভাবে মনে রাখবো?”
জুডিসিয়াল  সার্ভিস পরীক্ষা বা আইনজীবী নিবন্ধন পরীক্ষার প্রাথমিক নির্বাচনী বা এমসিকিউ (MCQ) পরীক্ষায় এখন প্রায়  ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ প্রশ্ন আসে ধারা নিয়ে। যেমন, দণ্ডবিধির কোন ধারায় চুরি নিয়ে বলা আছে? বা দণ্ডবিধিতে কত নম্বর ধারায় চুরির সংজ্ঞা আছে? ইত্যাদি। এছাড়াও লিখিত পরীক্ষায় যদি বর্ণনার সাথে সঠিক ধারা উল্লেখ করা যায় তবে পরীক্ষক বেশি নম্বর দেন।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল প্রাথমিক নির্বাচনী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হলে সঠিক ভাবে ধারা মনে রাখতে হবে। এই বিষয় মাথায় রেখে আজ আলোচনা করা হবে কিভাবে একজন আইনের শিক্ষার্থী আইনের ধারা সহজে মনে রাখতে পারবেন। অনেক জুডিসিয়াল সার্ভিস পরীক্ষার পরীক্ষার্থী সব গুলো আইনের নাম বলতে পারেন না সেখানে তাদের প্রশ্ন করা হয় আইনের ধারা নিয়ে। যেকোনো আইন পড়ার এবং ধারা মনে রাখার ধাপ গুলো হল;
ধাপ ১) সবার প্রথমে মনকে ঠিক করতে হবে যে  আপনি ধারা মনে রাখতে চান এবং মনের মধ্যে এই আগ্রহ  তৈরি করতে হবে ।
ধাপ ২) প্রথমে আপনি মুখস্থ করার চেষ্টা করবেন মোট কয়টি ধারা আছে , কয়টি অধ্যায় বিভক্ত এবং কি ?  যেমন, দণ্ডবিধি ১৮৬০ এ মোট ধারা রয়েছে ৫১১ টি এবং অধ্যায় রয়েছে ২৩ টি।
ধাপ ৩) এরপর উক্ত আইনের গুরুত্বপূর্ণ ধারা গুলো নির্বাচন করতে হবে।
যেমন দণ্ডবিধির গুরুত্বপূর্ণ ধারা:
মৃত্যুদণ্ডের ধারাগুলো: ১২১, ১৩২, ১৯৪, ৩০২, ৩০৩, ৩০৫, ৩০৭(২), ৩৯৬
যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের ধারা গুলো:
১২১, ১২১ক, ১২২, ১২৪ক, ১২৫, ১২৮, ১৩০, ১৩২, ১৯৪, ১৯৫, ২২৫, ২২৫ক, ২২৬, ২৩২, ২৩৩, ২৫৫, ৩০২, ৩০৪, ৩০৫, ৩০৭, ৩১১-৩১৫ , ৩২৬, ৩২৯, ৩৬৪, ৩৭১, ৩৭৬, ৩৭৭, ৩৮৮, ৩৮৯, ৩৯৪, ৩৯৬, ৪০০, ৪০৯, ৪১২, ৪১৩, ৪৩৬, ৪৩৭, ৪৪৯, ৪৫৯, ৪৬০, ৪৬৭, ৪৭২, ৪৭৪, ৪৭৫, ৪৭৭
সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের ধারাগুলো : ১২৬, ১২৭, ১৬৯
শুধুমাত্র জরিমানা দণ্ড : ১৩৭, ১৫৪-১৫৬, ১৭৬, ২৯৪ক, ১৭১, ২৭৮, ২৬৩ক, ২৮৩, ২৯০, ১২৩-১২৮, ১৩০, ১৩৪, ৩৮০, ৪৫৭।
দণ্ডবিধির প্রথম শাস্তির ধারা ১০৯ এবং
সর্বশেষ শাস্তির ধারা ৫১১।
সবচেয়ে কম শাস্তির ধারা ৫১০ এবং সর্বোচ্চ ৩০৩
এভাবে আপনার নিজের মত করে সাজিয়ে নিবেন।
ধাপ ৪) যেকোনো বিষয়ের শুরুর ধারা এবং শেষ ধারা। তাহলে যেকোনো মাথায় একটি কাঠামো তৈরি হবে উক্ত বিষয় সম্পর্কে। গুরুত্বপূর্ণ ধারার মাঝে যেসকল ধারা রয়েছে সেটা সম্পর্কে একটা ধারণা নিতে  হবে ।
যেমন চুরি বিষয়ে শুরুর ধারা ৩৭৮ এবং শেষ ধারা ৩৮২।
ধাপ ৫) নিয়মিত অনুশীলন করতে হবে। প্রতিদিন করলে খুব ভাল, না হলে সপ্তাহে অন্তত একবার পড়তে হবে। তাও সম্ভব না হলে অন্তত গুরুত্বপূর্ণ ধারা গুলো নিয়মিত পড়তে হবে।
আইন নিয়ে কিছু করতে হলে যেমন আপনি বিচারক বা আইনজীবী হলে আপনাকে ধারা মনে রাখতেই হবে। আর এই পেশায় পড়াশুনার কোন বিকল্প নাই। আমাদের দেশে প্রতিষ্ঠিত আইনজীবীগণ এখনো নিয়মিত পড়াশুনা করেন।
আশাকরি বিষয়টি সকলে বুঝেছেন। আপনি যদি উপরোক্ত ৫ ধাপ মেনে চলেন তবে আপনি অবশ্যই ধারা মনে রাখতে পারবেন। সব সময় মূল আইন পড়ুন এবং গাইড বা নোট বইকে সহায়ক বই হিসাবে ব্যবহার করুণ।
লেখক: পরিচালক বাংলা ল’ স্কুল ইউটিউব চ্যানেল এবং শিক্ষানবিশ আইনজীবী ঢাকা জজ কোর্ট

 
Copyright © 2019 Bangla Law School
Design and Developed By BanglaLawSchool. Powered by Bangla Law School