২০০৫ সালের অক্টোবরে আমি বিয়ে করি। বিয়ের আড়াই বছর পর নিরাপত্তারক্ষীর চাকরি করতে ঢাকায় আসি। দু-এক মাস অন্তর ছুটিতে বাড়ি যেতাম। কিন্তু চাকরির ছয় মাস পর আমার স্ত্রী আমাদের বাড়ি থেকে একদিন রাতে উধাও হয়ে যায়। ওই রাতে আমার বাড়ির সদস্য ও প্রতিবেশীরা অনেক খোঁজাখুঁজির পর রাত সাড়ে ১২টায় পাশের বাড়ির এক ছেলের ঘরে ওকে খুঁজে পায়। এর পরদিন সকালেই আমার স্ত্রীকে তার বড় ভাই বাড়ি নিয়ে যায়। এদিকে আমি খবর পেয়ে ঢাকা থেকে বাড়ি চলে যাই। এসে জানলাম, ঘটনাটি সত্য। ঘটনার পাঁচ দিন পর ওই ছেলে অন্য একটি মেয়েকে বিয়ে করে। পরের ছয় মাস স্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করিনি। ২০০৯ সালের ২১ মে কাজি অফিস থেকে তালাকের নোটিশ স্ত্রীর কাছে ডাকযোগে পাঠিয়ে দিই। স্ত্রী আমার বিরুদ্ধে ওই বছরের ২০ জুলাই যৌতুক নিরোধক আইনের ৪ ধারা ও দেনমোহর খোরপোশের দুটি মামলা করে। মামলার সাত দিন আগে আমার স্ত্রীকে আনতে গিয়েছিলাম। কিন্তু সে আসতে চায়নি। ২০ জুলাই হাজিরা দিলে আদালত আমাকে কারাগারে পাঠিয়ে দেন। এখন মামলা দুটি বিচারাধীন। আমি আর স্ত্রীকে কখনো গ্রহণ করব না। তাই ২০১০ সালের ৩ মার্চ তিন তালাক রেজিস্ট্রি করে কপি নিজের কাছে রাখি। আমি একটি টাকাও যৌতুক নিইনি। যৌতুক মামলায় যদি আমার পরাজয় হয়, তাহলে কেমন সাজা হতে পারে? ৪০ হাজার এক টাকা দেনমোহরে আমার বিয়ের কাবিন হয়। এই কাবিনের পুরো টাকা কী দিতে হবে? খোরপোশ কী পরিমাণ দিতে হবে? আমি অন্য কোনো মেয়েকে বিয়ে করতে পারব কি?
মো. রফিকুল ইসলাম, সাতকানিয়া, চট্টগ্রাম।
আইনজীবীর পরামর্শ : আপনার চিঠির প্রথম প্রশ্নের উত্তরে বলা যায়, যৌতুক নিরোধ আইন, ১৯৮০-এর ধারা ৪-এ সর্বোচ্চ শাস্তি পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা জরিমানা অথবা কারাদণ্ড ও জরিমানা উভয়ই হতে পারে। এ আইনের আওতায় ন্যূনতম শাস্তি এক বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।
দ্বিতীয় প্রশ্নের জবাব হলো, আপনাকে কাবিননামার পুরো ৪০ হাজার টাকা আপনার স্ত্রীকে পরিশোধ করতে হবে। যদি না আগে আপনি দেনমোহরের অংশবিশেষ পরিশোধ করে থাকেন। মুসলিম আইন অনুযায়ী বৈবাহিক সম্পর্ক বিচ্ছেদের পর পরবর্তী তিন মাস পর্যন্ত খরপোশ প্রদানযোগ্য। ওই খরপোশের পরিমাণ নির্ধারণ করা হয় স্বামী ও স্ত্রীর সামাজিক অবস্থানের ওপর ভিত্তি করে।
আপনি চিঠিতে তালাকের নোটিশের কথা উলে¬খ করেছেন, কিন্তু মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ ১৯৬১-এর বিধান অনুযায়ী তালাকের নোটিশ সংশি¬ষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বা সিটি করপোরেশনের মেয়রকে পাঠাতে হবে। ওই নোটিশ পাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে চেয়ারম্যান অথবা মেয়র দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতার চেষ্টা চালাবেন। সমঝোতায় ব্যর্থ হলে সেই ৯০ দিন পর তালাক কার্যকর হবে। তালাক কার্যকর হওয়ার পর আপনার দ্বিতীয় বিয়েতে আর কোনো বাধা নেই। চিঠির বক্তব্য অনুযায়ী আপনার তালাক এখনো কার্যকর হয়নি। এ অবস্থায় আরবিট্রেশন কাউন্সিলের অনুমতি ছাড়া যদি আপনি বিয়ে করেন, তবে আপনার স্ত্রী আপনার বিরুদ্ধে মামলা করতে পারেন এবং সে ক্ষেত্রে এক বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।
পরামর্শ দিয়েছেন
অ্যাডভোকেট আনোয়ারুল কবীর, বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্ট