RECENT POST

নোটিশ বোর্ড

মডেল টেস্ট

আইনের চাকরি

29 November 2016

ভূমি আইন : নামজারী

ভূমি আইন : নামজারী
ভূমি ব্যবস্থাপনায় মিউটেশন বা নামজারী একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া। জমি ক্রয় বা অন্য কোন উপায়ে জমির মালিক হয়ে থাকলে হাল নাগাদ রেকর্ড সংশোধন করার ক্ষেত্রে মিউটেশন একটি অপরিহার্য নাম। ইংরেজী মিউটেশন (Mutation) শব্দের বাংলা অর্থ হলো পরিবর্তন। আইনের ভাষায় এই মিউটেশন শব্দটির অর্থই হলো নামজারী। নামজারী বা নাম খারিজ বলতে নতুন মালিকের নামে জমি রেকর্ড করা বুঝায়। অর্থাত্ পুরনো মালিকের নাম বাদ দিয়ে নতুন মালিকের নামে জমি রেকর্ড করাকে নামজারী/নাম খারিজ বলে। ভূমি মালিকানার রেকর্ড বা খতিয়ান বা স্বত্বলিপি হালকরণের জন্য জরিপ কার্যক্রম চূড়ান্ত করতে দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন হয়। যে সময়ের মধ্যে উত্তরাধিকার সূত্রে, এওয়াজ সূত্রে বিক্রয়, দান, খাস জমি বন্দোবস্ত ইত্যাদি ভূমি মালিকানার পরিবর্তন প্রতিনিয়ত ঘটতে থাকে। যে কারণে প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল ভূমি মালিকানার রেকর্ড হালকরণের সুবিধার্থে জমিদারী অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন ১৯৫০ এর ১৪৩ ধারায় কালেক্টরকে (জেলা প্রশাসক) ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এই ক্ষমতা বলে জমা, খারিজ ও নামজারী এবং জমা একত্রিকরণের মাধ্যমে রেকর্ড হাল নাগাদ সংরক্ষণ করা হয়।
কমিশনার (ভূমি) ভূমি ব্যবস্থাপনা ম্যানুয়েল ১ঌঌ০ এর ২০ অনুচ্ছেদ বলে নামজারী বা মিউটেশনের দায়িত্ব পালন করে থাকেন। পূর্বে নামজারীর বা মিউটেশনের দায়িত্ব উপজেলা রাজস্ব বা অফিসার বা সার্কেল অফিসার (রাজস্ব) পালন করতেন।
নামজারী বিষয়ক অধিকার:
• নামজারীর মাধ্যমে নতুন মালিকানা তথা হোল্ডিং সৃষ্টি করার অধিকার।
(১৯৫০ সালের স্টেট একুইজিশন এন্ড টেনান্সি এক্টের ১৪৩ ধারা )
• নির্ধারিত কোর্ট ফি দিয়ে সহকারী ভূমি কমিশনারের নিকট নাম জারীর জন্য আবেদন করার অধিকার।
(ভূমি ব্যবস্থাপনা ম্যানুয়াল ১৯৯০)
• সংশোধিত খতিয়ান সংগ্রহের অধিকার
(ভূমি ব্যবস্থাপনা ম্যানুয়াল ১৯৯০)
• ষড়যন্ত্র করে কিংবা ভুলক্রমে অন্যের নামে নামজারী হয়ে থাকলে তা সংশোধনের অধিকার।
(১৯৫০ সালের স্টেট একুইজিশন এন্ড টেনান্সি এক্টের ১৪৩ ধারা )
• রাজস্ব অফিসারের আদেশে অসন্তুষ্ট হলে তার বিরুদ্ধে জেলা জজ কিংবা অতিরিক্ত জেলা জজ (রাজস্ব)-এর নিকট মামলা করার অধিকার। (১৯৫০ সালের স্টেট একুইজিশন এন্ড টেনান্সি এক্ট ১৪৭ ধারা)
• আপীলের জন্য সময় পাবার অধিকার।
(১৯৫০ সালের স্টেট একুইজিশন এন্ড টেনান্সি এক্ট ১৪৮ ধারা)
• রিভিশনের অধিকার (যদি আপীল করা না হয়ে থাকে)
(১৯৫০ সালের স্টেট একুইজিশন এন্ড টেনান্সি এক্ট ১৪৭ ধারা)
• রিভিউ পুর্নবিবেচনার অধিকার
(১৯৫০ সালের স্টেট একুইজিশন এন্ড টেনান্সি এক্টের ১৪৯ ধারা।)
• জমির ক্রেতা যদি সমবায় সমিতি বা হাউজিং কোম্পানী হয় তাহলে নামজারীর অধিকার।
(১৯৯০ সালের ভূমি ব্যবস্থাপনা ম্যানুয়ালের ৩২৭,৩২৮ অনুচ্ছেদ)
লংঘন:
• নামজারীর মাধ্যমে জমির মালিকানা সৃষ্টি করতে না দেওয়া।
• সংশোধিত খতিয়ানের কপি সংগ্রহ করতে চাইলে তা প্রদান না করা।
• নামজারীর সংশোধনের জন্য সময় না দেওয়া।
• আপিলের জন্য সময় ও সুযোগ না দেওয়া।
• রিভিশনের জন্য সময় ও সুযোগ না দেওয়া।
• রিভিউ এর জন্য সময় ও সুযোগ না দেওয়া।
সংশ্লিষ্ট প্রতিকার:
• আপিল
• রিভিশন
• রিভিউ
প্রতিকারের জন্য কোথায় যেতে হবে?
• থানা সেটেল্টমেন্ট অফিসে যেতে হবে।
• সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর বরাবরে নামজারীর জন্য লিখিত দরখাস্ত দাখিল করতে হবে।
• বড় এবং জটিল নামজারীর ক্ষেত্রে আইনজীবী নিয়োগ করলে ভালো হয়।
আপিলের সুযোগ আছে কি? ‘
আছে।
নামজারীর গুরুত্ব ও আইনগত মূল্য:
জমিদারী অধিগ্রহণ এবং প্রজাস্বত্ব আইন ১৯৫০ এর ১৪৩ ধারা মতে –
• নামজারী আদেশের ভিত্তিতে সংশোধিত খতিয়ানের সৃষ্টি হয়৷ সরকারী রেকর্ডের ভিত্তিতে মালিকের নাম প্রতিস্থাপিত হয়৷ সবচেয়ে বড় কথা হলো মালিকানা হালনাগাদ (নিশ্চিত) হয়৷
• নামজারীর আদেশ ভুক্ত জমিটুকু পূর্বের জোত জমা থেকে খারিজ বা কর্তন হয়ে আবেদনকারীর নামে নতুন হোল্ডিং এর সৃষ্টি হয়৷ কোন ব্যক্তি জমি ক্রয় বা অন্য কোন ভাবে জমি প্রাপ্ত হওয়ার পর নামজারী না হওয়া পর্যন্ত তা পূর্বের মালিকের নামেই (হোল্ডিং) থেকে যায়৷ এর ফলে পূর্বের মালিক ইচ্ছা করলে প্রতরণামূলক ভাবে জমিটি একাধিকবার বিক্রি/হস্তান্তরের সুযোগ নিতে পারে৷
• নামজারী আদেশ মূলে সৃষ্ট সংশোধিত খতিয়ান এর কপি সহকারী ভূমি কমিশনার এর মাধ্যমে বা ভূমি মালিকের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট সহকারী সেটেল্টমেন্ট অফিসার বা জরিপ কালে বুঝারত/তসদিক/আপত্তি/আপীল স্তরে জরিপ কর্তৃপক্ষের নিকট পেশ করা হলে ভূমি ব্যবস্থাপনা ম্যানুয়েল ১৯৯০ এর ৩২০ অনুচ্ছেদ অনুসারে জরিপ কর্তৃপক্ষ সংশোধিত খতিয়ানের ভিত্তিতে নতুন করে রেকর্ড সৃষ্টি করে থাকেন৷
• নিজের জমি নিজের নামে নামজারী না করলে অন্য কোন সহ শরীকে বা পাশ্ববর্তী জমির কোনো মালিক তার নামে জমি নামজারী করে নিতে পারে৷
• নামজারী মূলে পৃথক হোল্ডিং খুললে খাজনাদি পরিশোধ করা সহজ হয়৷
• ব্যাংক ঋণ, গৃহ নির্মান ইত্যাদি ঋণ নেয়ার জন্য নামজারী একান্ত প্রয়োজন৷
• তাই ভূমির মালিকানা অর্জনের সাথে সাথে তা নামজারীর মাধ্যমে নিজের নামে রেকর্ড সংশোধন করে হোল্ডিং খুলে জমি জমার রেকর্ড পত্র সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা উচিত৷
নামজারীর বিভিন্ন পদ্ধতি:
ভূমির মালিকানা যেমন বিভিন্ন ভাবে অরর্র্জিত হয় তেমনি নামজারীর ধরনও বিভিন্ন পদ্ধতিতে হয়ে থাকে।
যেমন:
• হস্তান্তর দলিল (এল.টি নোটিশ) মূলে নামজারী
• সার্টিফিকেট মূলে নামজারী
• এল.এ মোকদ্দমার ভিত্তিতে নামজারী
• আদালতের ডিক্রি মূলে নামজারী
• উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তির নামজারী
• আবেদনের ভিত্তিতে নামজারী
 
Copyright © 2019 Bangla Law School
Design and Developed By BanglaLawSchool. Powered by Bangla Law School